রাজু আহমেদ এর গল্প মন দিয়েছি বাড়িয়ে
কলেজের মাঠের শেষে একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে কিরণ আর ওর বন্ধু রাহাত। রাহাত কিরনকে জিজ্ঞেস করলো,‘কিরে কদিন ধরেই দেখছি তুই কেমন যেন উদাস উদাস। কোনো সমস্যা?’ কিরণ চুপ করে থাকে। রাহাত ওকে একটু জোরেই ওকে ধাক্কা দেয়। তারপর বলে, ‘কিরে কথা বলছিস না কেন?’
কিরণ বলে ‘আমি একটা মেয়েকে ভালবেসে ফেলেছি।’
রাহাত চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ তারপর জানতে চাই মেয়েটির কথা। কিরণ বলে, ‘মেয়েটির নাম রোজী। আমাদের কলেজেই পড়ে ফার্স্ট ইয়ারে। ওকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারছি না আমি। অথচ দেখ ওকে বলতেও পারছি না। যদি না করে দেয় তখন তো আরও বেশি কষ্ট পাবো।
রাহাত বলে ‘কবে কবে প্রেমে পড়ে গেলি কিছুই তো জানলাম না।’
‘আরে খুব বেশিদিন না, মাত্র এক সপ্তাহ হলো ওকে দেখছি। পরে দেখি আমি যে স্যারের কাছে কোচিং করি ও সেই স্যারের কাছেই কোচিং করে।’
কিরণের কথা শুনে রাহাত বললো, ‘এই তোর মতন ছেলেদের কারণেই না প্রেমটা এত সস্তা হয়ে গেছে, চেনা নেই জানা নেই দুম করে একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে বসলি।’
কিরণ বললো, ‘প্রেম এত সূত্র মেনে চলে না জানিস না, এত নিয়ম মেনেও প্রেম আসে না, আর কে বলেছে ওকে আমি চিনি না, ওতো আমার জনম জনমের চেনা, ও আমার শত জনমের প্রেম। ওর জন্যতো আমি সেই কবে থেকেই এক সুমদ্র প্রেম নিয়ে অপেক্ষা করছি। ওর সাথে আমার দেখা হবে, প্রেম হবে, তারপর আমরা সেই প্রেম সমুদ্রে হাবুডুব খাবো।’
রাহাত ওর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘তুই কি সিরিয়াস?’
‘সিরিয়াস না তো কি মজা করছি?’ একটু রাগান্বিত ভাবেই বললো কিরণ। তারপর রাহাত দেখতে চাইলো মেয়েটিকে, কিরণ ওদের থেকে একটু দুরে দাঁড়ানো দুটি মেয়ের মধ্যে নীল ওড়না পরা মেয়েটিকে দেখিয়ে জানালো ওই মেয়েটি। রাহাত জিজ্ঞেস করলো ‘ওর নাম জানিস?’ কিরণ বললো শুধু ‘রোজী এটুকু জানি আর কিছু জানি না।’
কিরণ বললো, ‘চল কথা বলি’ বলেই ওর হাত ধরে টানতে টানতে ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
কলেজের মাঠের শেষে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল রোজী আর ওর বান্ধবী জেরিন। দেখলে দুটো ছেলে ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো।
রাহাতই কথা শুরু করলো। কিন্তু কথা খুব বলে খুব বেশি সুবিধা করতে পারলো না। রোজীর বান্ধবী জেরিনের জন্য। রাহাত আর কিরনকে নানা রকম প্রশ্নে একেবারে নাজেহাল করে ছেড়ে জেরিন।
রোজীকে ভালবাসার কথা না জানানো পর্যন্ত অস্থিরতা কাটে না কিরণের। রাহাত ওকে পরামর্শ দেয় সরাসরি জানাতে। না হলে ফোনে অথবা ফেসবুকে টেক্সট করে জানাতে। ফোন নম্বর এবং ফেসবুক নম্বরও ম্যানেজ করে দেয় রাহাত। কিরণ কয়েকবার চেষ্টাও করে। কিন্তু পারে না। রাহাতকে বলে চিঠি দিয়ে জানাবে। রাহাত হাসে, বলে ‘এ যুগে কেউ চিঠি লিখে প্রপোজ করে না।’
কিরণ সিদ্ধান্ত নেয় চিঠি লিখেই জানাবে। অবশেষে কোচিং ক্লাশে রোজীর অজান্তে ওর ব্যাগের মধ্যে একটা বইতে চিঠি রেখে দেয়।
কানে হেডফোন লাগিয়ে চেয়ারে বসে বসে গান শোনা প্রতিদিনকার অভ্যাস রোজীর। কিছুক্ষণ পর ব্যাগ থেকে একটা বই বের করলো ও। বইয়ের পৃষ্ঠা ওল্টাতেই ভাজ করা একটা নীল কাগজ দেখলো। তারপর কাগজটা বের করে পড়লো।
রোজীকে চিঠি দেয়ার পর থেকে সারাদিন রাত ছটফট করে কিরণ। রাতেও ঠিকমত ঘুম হয়না ওর। পরদিন সকালে রাহাতকে ফোন দিয়ে কলেজে আসতে বলে। এত সকালে কলেজে যেতে বলায় ভীষণ অবাক হয় রাহাত। রাহাত কলেজে আসে। সারা কলেজে আর কেউ নেই। এমনকি কলেজের দারোয়ানও আসেনি।
রাহাত জিজ্ঞেস করে,‘কিরে কালকে সারারাত কলেজে ছিলি?’
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে কিরণ তারপর বলে ‘কাল রোজীকে চিঠি দিছি। কি যে হয় কিছুই বুঝতে পারছি না।’
রাহাত হাসে, বলে ‘শেষ পর্যন্ত চিঠি! যাক চিন্তা করিস না, চিঠি পেলেই মেয়েরা বেশি খুশি হয়, জবাব তো দিবেই।’ কিন্তু সেদিন রোজী কলেজে আসে না।
তারপরের দিন কোচিঙে দেখা হয় রোজীর সাথে। কিন্তু রোজী এমন একটা ভাব করে যেন কিছুই হয়নি। কিরণও কিছু জিজ্ঞেস করে না আর। এভাবে দু’তিন দিন পার হয়। কিরণ আবার চিঠি দেয়। কোনো জবাব নেই। তারপর আবার চিঠি দেয়। তবুও জবাব নেই।
কিরণ একটা সিদ্ধান্ত নেয়। যতদিন ও চিঠির জবাব না দেবে, ততদিন ও চিঠি দিতেই থাকবে। এভাবে প্রতিদিনই চিঠি দিতে থাকে কিরণ। মাঝে মাঝে চিঠির মধ্য কবিতাও লেখে। কোনো কোনোদিন দুইটা আবার তিনটা চিঠিও লিখতো ও।
প্রতিদিন কিরণের চিঠি পড়াটা অভ্যাস হয়ে গেছে রোজীর। কিরণের চিঠি না পড়লে যেন ওর ভাল লাগে না। মাঝে মাঝে ওর চিঠি পড়ে ভীষণ হাসি পায় ওর। মনে মনে ভাবে চিঠির ভাষা বুঝি এমন হয়।
‘আচ্ছা তুমি টিপ পরো কেন? তোমার টিপ পরার দরকার নেই। টিপ ছাড়াই তোমাকে বেশি ভাল লাগে। তুমি বরং মাঝে মাঝে কাজল পরতে পারো।’ কোনো কোনো চিঠিতে লিখলো,আজ তুমি সাদা পোশাক কেন পরেছো? ওটা বিধবাদের পোশাক। সাদা পোশাক দেখলেই কেমন যেন বিধবা বিধবা লাগে। আচ্ছা তুমি কি বৃষ্টি পছন্দ করো? আমার কিন্তু বৃষ্টি ভাল লাগে না। আমার ভাল লাগে শরতের আকাশ।‘
কোনো কোনো চিঠিতে আবার বাচ্চা কাচ্চা সংসার এসব নিয়েও লিখতো। এভাবেই পার হয়ে যায় তিন মাস। অথচ কিরণ জানতেও পারে না রোজী সেসব চিঠি পড়ে কিনা। কিন্তু তবুও ওর চিঠি লিখতে ভাল লাগে। কিরণের বিশ্বাস ওর ভালবাসা যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে ও রোজীর ভালবাসা পাবেই। শুধু রোজীর ভালবাসা নয়, রোজীকেও সারা জীবনের জন্য পাবে ও।
হটাত করেই বেশ কদিন কলেজে আসে না রোজী। ওকে না দেখে যেন অস্থির হয়ে যায় কিরণ। অবশেষে রোজীর বান্ধবী জেরিনের কাছে জানতে চাই রোজীর কথা। রোজী যা বললো সে কথা শোনার জন্য কিরণ তৈরি ছিল না কখনই। ওর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো কথাটি শোনার পর। জেরিন বললো রোজীর বিয়ে হয়ে গেছে। ও এখন শ্বশুরবাড়িতে আছে।
তারপর আর কলেজে যায় না। বাড়িতে চলে আসে। পরীক্ষার আগের দিন গিয়ে এক বন্ধুর বাড়ি থেকে পরীক্ষা দিয়ে আসে।
আট বছর পর...
দেখতে দেখতে আট বছর পার হয়ে যায়। পড়াশোনাও শেষ। এখন বাড়িতেই ব্যবসা করে। এই আট বছরে একটি দিনের জন্যও রোজীকে ভুলতে পারেনি কিরণ। বরং প্রতিটা মুহুর্তই রোজীর কথা মনে পড়েছে ওর।
আর কদিন পরেই পিএসসি পরীক্ষা। কিরণদের গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি থেকে প্রায় ৮৫জন ছেলেমেয়ে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। মুনিয়া বিনতে হিমির গার্জিয়ান হিসেবে তার প্রবেশপত্র নিতে এসেছে কিরণ। অফিস কক্ষে ঢুকে একজনক শিক্ষিকাকে জিজ্ঞেস করতেই একটু দুরে বসা শিক্ষিকাকে দেখিয়ে দিলেন তিনি। কিরণ দেখলো সেখানে আরও বেশকজন দাঁড়িয়ে আছে প্রবেশপত্র নেয়ার জন্য। সে দেখলো হিজাব পরা একজন সহকারি শিক্ষিকা মাথা নিচু করে কিছু লিখছেন, আর প্রবেশ পত্র দিচ্ছেন সবাইকে। কিরণও ওখানে গিয়ে দাঁড়ালো তারপর সবাই চলে গেলে কিরণ বললো, ‘ম্যাডাম প্রবেশপত্র নিতে আসছি। সহকারি শিক্ষিকা বললেন, ঠিক আছে বসুন। কিরণ বসলো, শিক্ষিকা কিরণের দিকে না তাকিয়েই বললো, ‘কার প্রবেশপত্র নিতে আসছেন?’ ‘মুনিয়া বিনতে হিমি’ উত্তর দিলো কিরণ। তারপর খাতা থেকে নামটি খুঁজে বের করে উনি বললেন, এখানে একটা সই করুন। এরপর কিরণ হাত বাড়িয়ে খাতা নেয়ার সময় দুজনের চোখাচোখি হলো। তারপর যা হলো সেটা হয়তো তারা দুজনের কেউই ভাবেনি। দুজনকে দেখে চমকে উঠলো দুজনেই।
যে মানুষটিকে রোজী অনবরত খুঁজেছে। যেই মানুষটির জন্য কত রাত কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়েছে রোজী। যেই মানুষটির চিঠির জন্য একবুক অপেক্ষা নিয়ে বসে থেকেছে রোজী। হটাতই জীবনে আসা এবং হটাত করেই জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া সেই মানুষটি তার সামনে বসে আছে। কি বলবে রোজী কিছু বুঝে উঠতে পারে না। শুধু জিজ্ঞেস করে ‘কেমন আছেন? ‘ভাল’ বলে প্রবেশপত্র নিয়ে বের হয়ে আসে কিরণ। রোজী জানে কিরণের বুকেও জমে আছে এক পাহাড় সমান অভিমান। আর এই অভিমান জমা হওয়ার জন্যও দায়ি সে নিজেই। দিনের পর দিন চিঠি দিয়ে গেছে কিরণ অথচ সে কোনো উত্তর দেয়নি। কিছুতেই কাজে মন বসে না রোজীর। প্রবেশপত্র দেয়ার সময় একজনেরটা আর একজনকে দিয়ে দেয়। গার্জিয়ানরা সেটা আবার শুধরিয়ে দেন। রোজীর বুকে পুষে রাখা এতদিনের সব কষ্টগুলো যেন বের হয়ে আসতে চাইছে। খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে ওর। ওয়াশরুমে গিয়ে কিছুক্ষণ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে।
কিরণ বাড়িতে প্রবেশপত্রটা রেখে বের হয়ে যায়। তারপর ওদের বাড়ির পিছনে যে নদীটা আছে সেখানে নদীর ধারে গাছের উপরে আকাশের দিকে তাকিয়ে শুয়ে থাকে। ওর মনেও ঝড় বয়ে যায়। নিজের ভালবাসার মানুষকে সামনে পেয়েও কিছু বলতে পারে না ও। কি বলবে? আর কিই বা বলার আছে ওর। বলেই বা কি হবে?
দেখতে দেখতে জীবন থেকে ৮ বছর পার হয়ে গেছে। ভাগ্যক্রমে রোজী চাকরি নিয়ে আসে কিরণদের গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে। একদিন বিকালে স্কুল ছুটির পর হিমিদের বাড়িতে গেলো রোজী। ওদেরকে বলেন হিমি কেমন পড়াশোনা করছে সেটা দেখতে এসেছে। রোজী ভেবেছিল হিমি হয়তো কিরণেরই মেয়ে। দেখতে অনেকটা কিরণের মতই। কিন্তু ওদের বাড়িতে গিয়ে জানতে পারলো হিমি কিরণের ছোটো ভায়ের মেয়ে। হিমির মার কাছ থেকেই জানলো সে কথা। ছোটো ভাইয়ের মেয়ে পিএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে অথচ কিরণ এখনও বিয়ে করেনি। একটু অবাকই হলো ও। এরপর হিমির সাথে কিছুক্ষণ গল্প করলো। তারপর কথায় কথায় ওর কাছ থেকে জেনে নিলো কিরণের কথা। হিমির মা ভাবি সবার সাথে কথা বলে তারপর বের হলো ওদের বাড়ি থেকে।
মাঝে মাঝেই কিরণ নদীর ধারে এসে বসে থাকে। বাঁশের বাঁশি বাজায়। কখনও ঘাষের উপরে শুয়ে থাকে। আকাশ দেখে আর পুরোনো স্মৃতিগুলোকে ভাবে। আজও সে নদীর ধারে ঘাসের উপরে বসে আছে। আনমনে বাঁশি বাজাচ্ছে। বাঁশিতে কষ্টের সুর বাজছে। কষ্টটা কি বাঁশির নাকি যে বাজাচ্ছে তার। সেটা আলাদা করে বলে দিতে হয় না। কিরণের ভেতরের কষ্টগুলো যেন বাঁশিতে কান্না হয়ে বেরিয়ে আসে। কিরণের মনে হলো কেউ যেন ওর পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। ঘাড় ঘোরাতেই একটু চমকিত হলো ও। দেখলো রোজী দাঁড়িয়ে আছে। রোজী বললো, ‘বসতে বলবেন না?’ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে কিরণ, তারপর বলে, ‘এটা তো আমার কেনা জায়গা না, চাইলে যে কেউ বসতে পারে। তা আপনি এখানে কেন এসেছেন? নাকি এতবছর পরে পুরোনো ক্ষতটা আবার জাগাতে চান।’
‘আপনাকে কিছু কথা বলার আছে আমার’ বললো রোজী। ‘কিন্তু আমার কিছু শোনার নেই’ কথাটি বলেই ওখান থেকে চলে যাবার জন্য উঠে দাঁড়ায় কিরণ। হাত ধরে একপ্রকার জোর করেই ওকে আবার বসিয়ে দেয় রোজী। তারপর কিছুক্ষণ চুপ থাকে দুজনেই।
একসময় কথা শুরু করে রোজী। আমি প্রথম যেদিন আপনাকে দেখেছিলাম। সেদিনই আপনাকে ভাল লাগে। প্রথমদিনেই বুঝতে পারি আপনিও আমাকে পছন্দ করেন। ভেবেছিলাম আপনি নিজ থেকেই বলবেন। কিন্তু বলেননি। তারপর একসময় চিঠি দিয়ে জানালেন। আমার মনে হয়েছিলো আমি হয়তো এই দিনটির জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। ইচ্ছে করেই জবাব দিইনি। মনে হলো আরও কদিন পরে দিই। পরে দেখলাম আপনি প্রতিদিন চিঠি দেয়া শুরু করলেন। আপনার চিটি পেতে আমারও ভাল লাগতো। তাই সেই ভাললাগাটাকে ধরে রাখতে চেয়েছিলাম আরও কিছুদিন। আপনার চিঠির জন্য প্রতিদিন অপেক্ষা করতাম আমি। ভেবেছিলাম খুব তাড়াতাড়ি আপনাকে আমার মনের কথা জানাবো।
তারপর হটাত করেই আপনি নেই হয়ে গেলেন। কোথায় গিয়েছিলেন আপনি? আপনার একবারও মনে হয়নি যে আমার প্রতিটা মুহুর্ত কতটা কষ্টে কেটেছে। কত খুঁজেছি আপনাকে। কোথাও পায়নি। ফেসবুক, মোবাইল সব বন্ধ। কলেজের সব বন্ধুদের সাথেও যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন আপনি। আপনার বন্ধু রাহাত ভাইয়ের কাছেও গিয়েছি সেও আপনার ঠিকানা দিতে পারেনি। প্রতিদিন অপেক্ষা করেছি হয়তো কেউ আপনার খোঁজ দেবে। অথবা আপনার চিঠি পাবো কিংবা হটাত করেই আপনার সাথে আমার দেখা হয়ে যাবে।’ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে রোজী।
আবার শুনশান নিরবতা। কিরণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে রোজীর দিকে। কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। তারপর সেও কথা বলা শুরু করে।
‘হটাত করেই বেশ কিছুদিন কলেজে আসছিলে না তুমি। কোচিঙেও না। প্রায় দশদিন হয়ে গেলো। আমি অস্থির হয়ে উঠছিলাম। তারপর তোমার বান্ধবী, জেরিনকে একদিন জিজ্ঞেস করলাম তোমার কথা। ও বললো তোমার নাকি বিয়ে হয়ে গেছে। নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি। কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তারপর ম্যাচ ছেড়ে দিই। বাড়ি চলে আসি। তোমার বিয়ে হয়ে গেছে, সবসময় সুখী থাকো সেটাই চেয়েছি।’
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার কথা বলে কিরণ, ‘যাক আমারই ভাগ্য খারাপ ওসব আর ভেবে কি হবে। যা হবার তাতো হয়েছেই। যা হোক এখন তো তুমি সুখী আছো নিশ্চয়, তারপর তোমার স্বামী কি করছেন? আর তোমার বাচ্চা আছে নিশ্চয়?’
রোজী তাকায় কিরণের দিকে। তারপর বলে, ‘আমার বড় বোন অসুস্থ ছিল। ওর বাচ্চা হবে সেজন্য সেসময় আমি বোনের বাসায় ছিলাম প্রায় ২০দিন। কলেজে এসে তোমাকে আর পেলাম না। জেরিন তোমার সাথে মিথ্যা বলেছিলো।’
কিরণ যেন ভাষাহীন হয়ে যায়। একবুক কষ্টভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে রোজীর দিকে।
কিছুক্ষণ পর রোজী একটা কাগজ বাড়িয়ে দেয় কিরণের দিকে।
তাতে লেখা, ওরই লেখা কবিতার কয়টা লাইন,
‘ মন দিয়েছি বাড়িয়ে
কেন রয়েছো দাঁড়িয়ে,
চলো আজ হাতে রেখে হাত,
হারিয়ে যায় দূর অজানায়
তুমি আজি দুজনায়।’
কিরন আস্তে করে ডাকে, ‘রোজী’ তারপর যা হয়
নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না রোজী, ঝাঁপিয়ে পড়ে কিরণের বুকে।’
একটু মুচকি হেসে সর্যটা যেন ঘরে ফিরে গেলো। অন্ধকারে ওরা বরং আগামীদিনের স্বপ্ন বুনুক।
কোন মন্তব্য নেই