নিজের অজান্তেই পরকিয়ায় জড়াচ্ছেন নাতো?
রাজু আহমেদ : পরকিয়া একটি সামাজিক ব্যাধি। বর্তমান সমাজে ভাইরাসের মত ছড়িয়ে পড়ছে পরকিয়া। ঘরে স্ত্রী অথবা স্বামী আছে তারপরও অনেকেই ঝুঁকছেন অন্য সম্পর্কের দিকে। এতে ভেঙে যাচ্ছে অনেক সংসার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অনেক পরিবার। বুঝে বা না বুঝে অনেকেই জড়িয়ে পড়ছেন পরকিয়া নামক ক্ষনিকের মোহে। নিজের পরিবার এবং তাদের নিজেদের মানসম্মান কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছেন না তারা।
প্রশ্ন হচ্ছে কেন জড়াচ্ছে মানুষ এমন এমটি সম্পর্কের দিকে যার কোনো সামাজিক স্বীকৃতি নেই। তার নানা কারণই হয়তো থাকতে পারে। একই সঙ্গে চলতে চলতে আপনি হয়তো আপনার সহকর্মী বা বন্ধুর প্রেমে পড়ে যাচ্ছেন সে বিবাহিত জেনেও। আর এর ফল পড়ছে উভয় পরিবারের উপরেই। আপনি হয়তো ভাবছেন না এর পরিণতির কথা। হয়তো ভাবছেন কি আর এমন হবে। যেহেতু আমরা দুজনই দুজনকে চাই তাই এতে কোনো সমস্যা নেই। আপনি অবশ্যই পারেন আপনার সঙ্গি কিংবা সঙ্গিনী নির্বাচন করতে। সে অধিকার আপনার আছে। কিন্তু একটা সময়ে এসে পরিবার এবং সমাজের কথা চিন্তা করে অনেক কিছু করা উচিৎ না।
ঘটনা-১
সাফিনা (ছদ্মনাম) নামের ৩০ বছরের একটা মেয়ে। বিয়ে হয়েছে পনের বছর বয়সে। তার দুটি সন্তানও আছে। একজনের বয়স ১০ আর একজনের বয়স ৭। রুবেল (ছদ্মনাম) যার বয়স ৩১। সম্পর্কে সাফিনার দেবর হয়। সাফিনার স্বামী ঢাকায় থাকে। সেখানে একটি বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। রুবেল নিয়মিত যাতায়াত করতো সাফিনাদের বাড়িতে। ভাবি সম্পর্কের হয় বলে বেশ ঠাট্টা মশকরাও চলতো তাদের মধ্যে। সাফিনার স্বামীও বিষয়টা জানতো। রুবেল তার ছোটো ভাই সম্পর্কের হওয়ায় সুবিধা অসুবিধায় তার বউয়ের দিকে খেয়াল রাখতে বলেছিল। তারপর এভাবে চলতে চলতে সাফিনার সাথে রুবেলের একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। সে সম্পর্ক সবার অগোচরে চলতে থাকে বেশ কিছুদিন। তারপর রুবেল তার ভাবি সম্পর্কের সাফিনাকে নিয়ে উধাও হয়ে যায়। এরপর দুইটা বাচ্চা রেখেই সাফিনা রুবেলকে বিয়ে করে ফেলে। ভেঙে যায় একটা গড়ে ওঠা সংসার। আর তিনটা পরিবারের বিশ্বাস। দুইটা ছেলে তাদের মায়ের আদার ¯েœহ থেকেও বঞ্চিত হয়।
ঘটনা-২
একই পাড়ায় বাড়ি রাসেল (ছদ্মনাম) আর আমানের(ছদ্মনাম)। দুজনই বিবাহিত। একই পাড়ায় বাড়ি হওয়াতে দুজনেই দুজনের বাড়িতে যাওয়া আসা হতো। বয়সও দুজনের ৪০শের কাছাকাছি। এভাবে চলতে চলতে রাসেলের সঙ্গে আমানের বউয়ের একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। সেই সম্পর্ক এক সময় অবৈধ সম্পর্কে গড়ায়। এভাবে বেশ কিছুদিন চলতে চলতে বিষয়টা জানাজানি হয়। তারা ধরাও খায় কয়েকবার। শালিশও হয়। কিন্তু কোনো ভাবেই তাদের দমানো যাচ্ছিল না। শেষে আমান সিদ্ধান্ত নেয় যে এই বউ আর রাখবে না। এরপর উভয় পক্ষ বসে বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে বিষয়টা আবারও মীমাংসা করে দিয়ে। এদিকে রুবেলের সংসারেও চলে অশান্তি। এভাবেই চলতে থাকে ঘটনা।
বাংলাদেশের আনাচে কানাচে এমন হাজার হাজার ঘটনা ঘটছে। শিক্ষিত অশিক্ষিত বলে কোনো কথা নেই। সবাই জড়াচ্ছেন এই সম্পর্কে। অনেক প্রতিষ্ঠিত মানুষ এমন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন। একটা যেন ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ছে পরকিয়া। কত সাজানো গোছানো সংসার ভেঙে যাচ্ছে এই পরকিয়ার কারণে। তাই কোনো ভাবেই কাম্য নয় এমন সম্পর্কের। যে সম্পর্কের সামাজিক স্বীকৃতি নেই। কোনো সম্মান থাকে না। এমনকি ধর্মেও কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে। তেমন সম্পর্ক তৈরি করা কোনো ভাবেই উচিত না।
এমন সম্পর্ক করার আগে অন্তত একশবার ভাবুন। এটা অসম্ভব না যে আপনি পারবেন না। অনেক কিছু চিন্তা করলে অবশ্যই সম্ভব। আপনি চিন্তা করুন আপনার সন্তান যখন জানতে পারবে আপনার এমন একটি সম্পর্কের কথা তখন তাদের মনে আপনার জন্য যে ভালবাসা যে শ্রদ্ধাবোধ যে মমতা সেটি কি আর থাকবে? কখনই না। যদি বাচ্চা না থাকে কিংবা বিবাহিত নাও হন। তবুও ভাববেন না যে এটা বৈধ বা ভাল। আপনার পরিবার এমনকি সমাজের প্রত্যেকটা মানুষই আপনাকে বাঁকা চোখে দেখবে। কেউ আপনাকে সম্মান করবে না। আপনার ছোটো ছোটো ভাইবোন তাদের কাছেও আপনি সম্মাহীন হয়ে যাবেন।
বেঁচে থাকার জন্য যদি আপনার ন্যূনতম সম্মানটুকু না থাকে তাহলে সেই বেঁচে থাকা অর্থহীন। আপনার পে^ছনে এমনকি সামনেও লোকে অনেক কথা বলবে। অনেকে আপনার পরিবারকেও হেয় করবে। যদি বিবাহিত হন তবে নিজের স্ত্রী কিংবা স্বামীর কাছ থেকেও সম্মানটুকু হারাবেন। তাই আমাদের কখনওই কাম্য নয় এমন সম্পর্কের দিকে ঝুঁকে যাওয়া। নিজের পরিবারের কথা ভাবুন। তাদেরকে বেশি বেমি সময় দিন। সমাজে সম্মানের সাথে মাথা উচু করে বাচুন।
কোন মন্তব্য নেই