Header Ads

Header ADS

গল্প: সুখ-অসুখ

ডাক্তারের চেম্বারে রিপোর্টগুলো হাতে নিয়ে বসে আছি। চোখের পানি গুলো রিপোর্টের উপরে পড়ে রিপোর্টের কাগজগুলো একটু একটু করে ভিজে যাচ্ছে। মিরা মা হতে চলেছিল!
জীবনটা মাঝে মাঝে অসহ্য রকম সুন্দর লাগে। এতই সুন্দর লাগে যে মনে হয় চোখ বুজে এই চারতলা থেকে ঝাঁপ দেই। অথচ অসুখীদের তালিকা দীর্ঘ বেশি। প্রেমের বিয়ে আমাদের। বিয়ের আগে কতজন বলেছিল। প্রেম করছিস কর বিয়ে করিস না। সারাজীবন জ্বলবি, পস্তাবি। কিন্তু আমি মিরাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারছিলাম না। এখনও পারিনা। এত সুখ ভীষণ অসহ্য লাগে মাঝে মাঝে। আমার কাছে এইটারে সুখের অসুখ মনে হয়। একটু রাগ হবে অভিমান হবে ঝগড়া হবে। কিছুই হয়না আমাদের। আমি মাঝে মাঝে মিরার সাথে ঝগড়া করার চেষ্টা করি। কিন্তু মিরাতো হেসেই অস্থির, ওর হাসি দেখে আমিই ঝগড়ার কথা ভুলে যায়। একটা মেয়ে এত সুন্দর করে হাসবে কেন? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করি। আমি বোকা বোকা চোখে মিরার দিকে তাকিয়ে থাকি। ও তখন সুন্দর করে দু আঙুল দিয়ে আমার নাক টিপে দিয়ে বলবে, ‘ওলে বাবুটা কিভাবে তাকিয়ে আছে দেখ, আমিতো পাগল হয়ে যায় সোনা এভাবে বোকা বোকা চোখে তাকিওনা’।
আমি হেসে ফেলতাম, পাগলি একটা এভাবে বাচ্চাদরে মত কেউ আদর করে।
ছোট্ট দুরুমের ফ্ল্যাট আমাদের। পাঁচতলা বাসার চারতলায় থাকি আমরা। একরুমে আমরা থাকি আর অন্য রুমে আত্মীয় স্বজন আসলে থাকতে দিই। বেশ সাজানো গোছানো ছিমছাম। মিরা সবসময় সাজিয়ে গুছিয়ে রাখে। ছোট একটা ব্যালকনিও আছে। আমি আর মিরা প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যার পর এখানে বসে চা খায় আর গল্প করি। এখান থেকে খোলা আকাশ দেখা যায় সামনে আবার খোলা মাঠ তারপর মেইন রোড। ব্যালকনিতে কিছু ফুলের টবও রেখেছে মিরা। একসময় ফুলের বাগান করার খুব শখ ছিল ওর।
মাঝরাতে হটাৎই ঘুম ভেঙে গেল। দেখলাম মিরা বিছানায় নেই। ভাবলাম হয়তো ওয়াশরুমে গেছে। তাই আবারও ঘুমিয়ে পড়লাম। প্রতিদিন সাতটার দিকে মিরা আমাকে ডেকে দেয়। ৯টায় অফিস। মিরাও একটা চাকরি করে। দুজনে একসাথেই যায়। কিন্তু আজ যখন ঘুম ভাঙলো তখন দেখি ১১টা বাজে। ভীষণ অবাক হলাম আর মেজাজও খারাপ হলো মিরার উপর। আশ্চর্য ও আমাকে আজ ডাকেনি কেন। মিরা মিরা বলে ডাকলাম কোনো সাড়া নেই।
সারা ঘরে কেমন যেন একটা নিরবতা বিরাজ করছে। বিছানা থেকে নামলাম। ভাবলাম আজ ভীষণ অবাক হলাম। কিন্তু মিরা কোথায় গেল? হটাৎ করে কেন যেন বুকটা ধক করে উঠলো। তাড়াতাড়ি উঠেই পাশের ঘরে গেলাম। এক মুহুর্তেই যেন সমস্ত পৃথিবীটা দুলে উঠলো। ফ্যানের সাথে ঝুলতে থাকা মিরার বেরিয়ে আসা চোখ দুটো ভয়ার্থ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
একমুহূর্তেই পৃথিবীটা আমার থেকে আলাদা হয়ে গেল। কি করবো আমি। কিভাবে বাঁচবো। মিরা একবারও ভাবলো না আমার কথা। এভাবে আমাকে ছেড়ে যেতে ওর একটুও কষ্ট হলোনা। ওর একবারও মনে হলোনা ওকে ছেড়ে আমি কিভাবে বেঁচে থাকবো। চেনা সুখ গুলো আমার অচেনা হয়ে গেল।
ছোট্ট একটা অপারেশন হয়েছিল মিরার। তেমন জটিল কিছুনা। তাও দুবছর হতে চলল। এরপর ডাক্তার বলেছিল মিরার মা হওয়ার সম্ভবনা কম। ওকে সে কথা জানায়নি আমি। কিছুদিন হলো ও কথাটা জানতে পেরেছিল। এরপর ও মানসিক ভাবে খুবই ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু ওযে এতটা ভেঙে পড়বে আমি ভাবিনি। ভেবেছিলাম ওতো মূর্খ না ঠিক মানিয়ে নেবে। কিন্তু এইটা কি করলো মিরা।
মিরা মারা যাওয়ার একদিন আগেই কিছু টেস্ট করিয়েছিলাম। একমাস আগে হাসপাতাল থেকে সেগুলো আনতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মিরা মারা যাওয়ার পর আর আনা হয়নি। কি করবো আর ওগুলো দিয়ে। আর রিপোর্ট জেনেই বা কি হবে। ডাক্তার আমার পরিচিত ছিলেন তাই বার বার যেতে বলেছেন।
পাগলিটা একবারও বুঝতে পারেনি যে ওর ভেতর আর একটা মানুষ ওকে মা বলে ডাকার জন্য ধীরে ধীরে ওর ভেতর বেড়ে উঠছিল !
___________________________________________________

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.